অসম ভালোবাসায় দাউ দাউ করে জ্বলে বাড়ির চিলেকোঠা। অলিন্দ অনলে পুড়ে যাওয়া চিঠিগুলোয় কেটে যায় সময় নিমগ্ন। হঠাৎ বিভোর করে স্মৃতির পাতায় ছোট্ট তরীর গোধূলী লগ্ন। বিরহ রঙিন করে প্রেমিকের দেয়া একগুচ্ছ বেগুনি ফুল। চোখের জলে ভিজে যায় শাপলার মালা। জল থেকে তুলে আনা ব্যাটে বিশ্বজয় প্রেয়সীর মন জয় করার কী উপায়?'' অলিন্দ অনলে একটি অসম প্রেমের গল্প। প্রেয়সীর প্রতি তীব্র ভালোবাসা নিয়ে কেওয়াটখালী রেলব্রিজে ছুটে চলার গল্প। সীমাহীন অনিশ্চয়তা নিয়েও আশায় বুক বাঁধার গল্প। শেষ পর্যন্ত কি হয় অলিন্দ অনলে পুড়তে থাকা অন্তরার? অলিন্দর গাঢ় কবিতা আর অসম প্রেমের শেষ স্টেশন কোন শহরে?
"নারী পুরুষের মধ্যকার কেমিস্ট্রি বা রসায়নের ব্যাপারটা মনে হয় বেশ জটিল। সুমির যখন বিয়ে হয়েছিল তখন ওর বিশ বছর বয়স। হবু বর আবেদকে দেখে একটুও আকৃষ্ট হয়নি ও। কিন্তু আবেদের সুমিকে অনেক ভালো লেগেছিল। তারপর সেই একপক্ষের আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে সুমির বিয়ে আর চব্বিশ বছরের সংসার। দুই কন্যা, এক পুত্র আর স্বামীকে নিয়ে প্রবাসের একেবারে হিমহাম আদর্শ সংসার।
এতগুলো বছরে সুমির মনে হয়েছে শরীরের আনন্দের চেয়ে জীবনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে স্বামী আবেদের সাথে তার সম্পর্ক শরীরের আকর্ষণ বা রসায়নের সমীকরণে বাঁধা না। এই সম্পর্ক সম্মান, ভালোবাসা, বিশ্বাসের তারে বাঁধা। কিন্তু সুমির এতদিনের ধারণার শক্ত ভিতে হঠাৎ করেই নাড়া দেয় তার বড় মেয়ে নাবিলা। যে কি না সুমির চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শ এবং বাধ্যগত মেয়ে।
যুক্তরাজ্যের পটভূমিকায় লেখা “হৃদয়ের রসায়ন” উপন্যাস করোনা অতিমারীর সময় সুনির সংসারের পাঁচজনের জীবনের গল্প। ছিমছাম সাজানো সংসারটা কেমন করে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে, সেই গল্প সর্বোপরি মা এবং মেয়ের হৃদয়ের রসায়নের গল্প।
মৌরি মরিয়ম বর্তমান বাঙালি লেখক সমাজে জনপ্রিয় এক নাম মৌরি মরিয়ম। ১৯৯১ সালের ২৫ মে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মৌরি মরিয়ম জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আজিজুল হক এবং মা মনজু বেগম। তিনি বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকার শহরঞ্চলে। ধানমন্ডি গার্লস স্কুল থেকে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক এবং বদরুন্নেসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। শৈশবকাল থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে মৌরির। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত গল্পের বই পড়তেন তিনি। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ তার। তার লেখক প্রতিভা জাগ্রত হয় স্কুলের ম্যাগাজিনে গল্প-কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। সেই থেকেই লেখক সত্ত্বাকে জিইয়ে রেখেছেন মৌরি। ছাত্রজীবনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রচনা করেছেন ৪-৫টি উপন্যাস। তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১৮ সালে। মৌরি মরিয়ম এর উপন্যাস ‘প্রেমাতাল’ ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়। ঠিক এর পরের বছর ২০১৯ সালের বইমেলায় তিনি উপহার দেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অভিমানিনী’। ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব’ তার প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস। এরপর মৌরি মরিয়ম এর বই সমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর’। খুব অল্প সময়ে মাত্র ৪টি উপন্যাস দিয়ে তিনি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। মৌরি মরিয়ম এর বই সমূহ পাঠককূল আগ্রহভরে পড়ে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখির জন্য সময় তিনি বের করেই নেন, কেননা বই লেখা মৌরি মরিয়মের নেশা। সারাজীবন তিনি লেখালেখির মধ্যেই থাকতে চান।
যে বাড়িটা একসময় গৃহস্থালি কাজে সারাদিনমান কোলাহলমুখর থাকত, সে বাড়িটা ধীরে ধীরে নিজেদের পুরোদস্তুর গার্হস্থ্য জীবন গুটিয়ে নিল। যে বাড়িতে ছুটির মৌসুমে ঘর ভরে যেত মেহমানে, মাটিতে শীতলপাটি বিছিয়ে শয্যা পাততে হতো জায়গা সংকুলান না হওয়ায়, সেই বাড়িতে এখন মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ে না বছরের পর বছর। যে বাড়িতে প্রায় উনিশ-কুড়িটা জানালা দিয়ে রোজ সূর্যের আলো প্রবেশ করত ঘরে, সন্ধ্যে হলে নাকবারান্দায় জ্বলে উঠত বৈদ্যুতিক আলো, সেই বাড়িজুড়ে এখন থইথই অতল অন্ধকার। পৌষের মধ্যরাত পর্যন্ত যে বাড়ির উনুনঘরে পিঠাপুলি বানানো হতো, সেই উনুনঘর থেকে এখন আর পিঠাপুলির গন্ধ ভেসে আসে না। বছর যায়, ক্যালেন্ডার বদলায়, একের পর এক পৌষ মাস এসে চলেও যায়, কিন্তু সেই উনুন ঘরের বন্ধ দরজাটা আর খুলে না। ঋতুবদলের ঘূর্ণিপাকে প্রকৃতিতে বর্ষা আসে, পদ্মা নদী যুবতী হয়ে উঠে, চরাচর ভেসে যায় উচ্ছ্বল পানিতে। ঐ বাড়ির উঠোনেও পানি জমে, বহির্বাটি দিয়ে স্রোত আপন গতিতে চলে যায় মাঠে-ঘাটে। কিন্তু এখন আর কেউ ঘরে পানি উঠে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করে না সেখানে। কেউ দক্ষিণের জানালা খুলে দেখে না, পানি কতটুকু বাড়ল বা কমল। প্রতি পূর্ণিমায় ঐ বাড়ির টিনের চালাতেও জ্যোত্স্না আছড়ে পড়ে। কিন্তু উঠোনে মাদুর বিছিয়ে জ্যোৎস্না দেখে না কেউ আর। বাড়ির কোল ঘেঁষে কারো কল্পনায় অনাথের মতো একা দাঁড়িয়ে থাকে নিঃসঙ্গ শিমুল গাছ। সেই গাছজুড়ে ফুটে থাকে লাল টুকটুকে শিমুল ফুল। শিশিরের মতো টুপটাপ শব্দে তা ঝরে পড়ে। কিন্তু কোচর ভরে সেই শিমুল ফুল কুড়িয়ে নেওয়ার মতো কেউ নেই আর। তবুও বাড়িটা অপেক্ষায় থাকে । আপনজনের ফিরে আসার অপেক্ষায়! প্রচ্ছদ: মো: সাদিতউজজামান
বাস্তবতার চরম নিরিখে পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ না পাওয়ার দলে পরে যায়। তাঁরা ভীষণ ভালো মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বিধাতা কেন জানি তাঁদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে রাখেন। তাঁরা কারো ভালোবাসা পায় না, বন্ধু পায় না, মৌলিক চাহিদাটুকু পায় না, কান্না করার জন্য নিজের একটা ঘর পায় না, বর পায় না, সংসারও পায় না। পায়না একটা সন্ধ্যামণি ফুলও! শুধু না পাওয়ার স্রোতে ভাসতে থাকে ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারে। আহা কি দ্বন্দ্ব ও দ্যোতনার এই দুর্বর্ণ জীবন।
"উপন্যাস সাহিত্যের আদি অন্যতম প্রধান শাখা। ধারণা করা হয়, যখন পৃথিবীর কোনো অক্ষর জ্ঞান ছিলো না, তখনও মানুষের ভাবনায় উচ্চারণে নানামুখী জীবনের অব্যক্ত গল্প ভাবনা থাকতো । কবিতার মতো উপন্যাস খুব একটা ঋতু বদল করেনি। তবে আধুনিক উপন্যাসের ধরণ খানিকটা বদলেছে বলা চলে । কারণ আগে উপন্যাসের বিষয়বস্তু এবং সব গুলো চরিত্র গল্পাকারে এক সাথে লিখা হতো। তবে আগের ধারাকে ঠিক রেখে এখন আধুনিক লেখকরা সিনেমাটিক ওয়েতে প্রতিটি চরিত্রকে ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে থাকেন পুরো গল্পটায়।
‘কাগজের পুরুষ' কাব্য-উপন্যাসটিও ঠিক তেমনভাবেই লিখা। এতে এমন কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান সমসাময়িক বিষয়কে ঘিরে যার ৮০ শতাংশই সত্য। একজন যৌন কর্মীর জীবনকে তিন ভাগে তুলে এনেছেন লেখিকা এখানে। শতভাগ সত্যতা ফুটিয়ে তুলতে লেখিকা নিজে পতিতালয়ে দুই দিন এক রাত থেকেছেন সেই সব নারীদের মাঝে । সমাজ পতিতা বা প্রস্টিটিউট তাদের বলে যারা শুধু তিন বেলা পরিবারের কিছু মানুষকে ভাতের গন্ধ দেয়ায় এই পেশা বেছে নেন। কিন্তু সত্যিকারের কর্পোরেট প্রস্টিটিউট আমাদের সকলের আশেপাশে শতশত । যাঁরা মেধাকে ব্যবহার না করে শর্টকাটে উপরে উঠতে শরীরকে পূঁজি করে। তিন বেলা শুধু মোটা চালের তিন থালা ভাতের গন্ধ নেয়ায় দিন তিনশো থেকে পাঁচশ টাকায় যারা সম্ভ্রম বিলায় তারা প্রস্টিটিউট নয় । এই সমাজ তাদের নামের আগে এই শব্দ জুড়ে দিয়েছে। কারণ যে মানুষটার এই ২০২২ সালে এসেও দিন পাঁচশ টাকা হলে ৪/৫ জনের একটা পরিবার দিব্যি খেয়ে পরে হাসিমুখে বাঁচে। সমাজের বিত্তবানরা তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু দিব্যি-এক ঘণ্টা-এক রাতের বিনোদনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের পেছনে খরচ করে যারা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেন শহরের নামি দামী পয়সাওয়ালাদের ঝাড় বাতি হতে। যতদিন সমাজ থেকে এই ঝাড় বাতির মিছিল দূরীকরণ না হবে ততদিন এই সমাজ অর্ধ বিকলাঙ্গই রয়ে যাবে। প্রস্টিটিউট নাম বহনকারী একজন নারীর জীবন ঠিক কতটা নিখুঁত পরিচ্ছন্ন কঠিন হতে পারে তা নিজ চোখে অবলোকন না করলে বোঝানো যাবে না। যে দেশে এক কেজি সরু চালের দাম ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। সেই দেশে এখনো ৭০-৮০ টাকার বিনিময়ে পতিতালয়ে একজন নারীর শরীর পাওয়া যায়।
এই লজ্জা কার ?????
"ডাইনী' আর 'ডাইনী পুনরাগমন' পাঠকের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছিল।
'ডাইনী', যেখানে অজ্ঞাতনামা এক লাশের সাথে পাওয়া ডায়েরিতে মৃত ব্যক্তি নিজেকে ডাইনী বলে দাবি করে। চিরযৌবন আর অমরত্ব ধরে রাখতে ডাইনীদের এক বিশেষ ধরণের 'তামালিক' পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরী করতে হয়। ডাইনীরা তামালিক পুরুষের প্রাণশক্তি নিজের মধ্যে ধারণ করে নেয় ফলে অকালে মৃত্যু হয় তামালিকের। ডাইনীদের মাঝে মানবিক অনুভূতি অনুপস্থিত থাকলেও মানব মনের অব্যক্ত গোপন কথা জেনে, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার নিষিদ্ধ আনন্দ পায়। তবে এরা যদি সত্যি সত্যি কাউকে ভালোবেসে সন্তান ধারণ করে, তবে তাদের ডাইনী শক্তি নিঃশেষ হয়। শেষ পর্যন্ত গল্পের ডাইনী নিজেকে সংযত করতে পারে না, ডাইনী থেকে পরিণত হয় এক সাধারণ মানবীতে, রেখে যায় উত্তরসূরিকে । কিন্তু কোথায় সে ?
সিরিজের পরবর্তী বই 'ডাইনী পুনরাগমন' এ শাহানা নামের মেয়েটি নিজের অলীক শক্তি আবিষ্কার করে । ডাইনী শক্তি ব্যবহার করে নিজের সাথে হওয়া ঘোরতর অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয় সে। এই যাত্রায় তার সাথে পরিচয় হয় জীবনের প্রথম তামালিক পুরুষ লেখক আনোয়ার সাদাতের। গল্পের শেষে শাহানা লেখকের জন্য একটি রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে থাকে। শাহানা জানে না লেখক তার সাথে দেখা করতে আসবে কিনা। পাঠকের মনেও প্রশ্ন তৈরী হয়, আনোয়ার সাদাত কি এসেছিল ডাইনী শাহানার পাতা জালে আটকে যেতে?
সিরিজের শেষ বই 'ডাইনী সমাপ্তি' তে পাঠকের সব কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কোথায় তবে শাহানার গন্তব্য? ডাইনী শক্তি বলে আসলেই কি কিছু আছে? থাকলে তার উৎস কোথায় ?
ডাইনী জীবনের পরবর্তী উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রার সহযাত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ রইলো 'ডাইনী সমাপ্তি' তে। ('ডাইনী সমাপ্তি' পড়ার আগে 'ডাইনী' এবং 'ডাইনী পুনরাগমন' পড়া থাকলে এই বইটি
পাঠকের জন্য বেশি উপভোগ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস)"
'আমার যে একটা বিয়ে হয়েছিল, এই পরিচয়টা কি কখনো মুছে ফেলা যাবে? যাবে না।' ‘আজাদ বলল, ‘জীবনভর ভুল মানুষের কারণে আমাদের জীবনে অসংখ্য ভুল হয়। সেই ভুল থেকে ক্ষত তৈরি হয়। কিন্তু সময় সেই ক্ষত ক্রমশই মুছে দিতে থাকে। আর আমরা যারা বোকা তারাই কেবল সেই ক্ষতগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আবার দগদগে ঘায়ে রূপান্তরিত করি। তাকে শুকাতে দেই না।’ ‘কিন্তু সময় যদি কারো ক্ষত শুকিয়ে দিতে না পারে? যদি তা দুঃসহ স্মৃতি হয়েই থেকে যায়?’ ‘তাহলে সেটি মোছার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘কীভাবে মুছব?’ ‘অনেক অনেক ভালো স্মৃতি তৈরি করে। ঘরের দেয়ালে নোনা ধরলে কিংবা পলেস্তরা খসে গেলে আমরা কী করি? তেমনই রেখে দেই? যাতে ধীরে ধীরে পুরো বাড়িটাই নষ্ট হয়ে যায়?’ ‘উহু। ‘তাহলে? আমরা তাকে ধুয়ে মুছে নতুন রঙ করি। যাতে সেই নোনা ধরা দেয়াল ঝলমলে হয়। নষ্ট হয়ে না যায়। জীবনও তেমনই। এখানেও এর দেয়ালজুড়ে অসংখ্য ক্ষত তৈরি হয়, নোনা ধরে। সেসব ধুয়ে মুছে নতুন রঙ না করলে তা আরও বাড়ে। বাড়তেই থাকে। তারপর নষ্ট করে ফেলে পুরো জীবনটাই। ‘ঘরের দেয়াল রঙ করা যায়, জীবনের না। কারণ, জীবনের রঙ কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না।’ ‘যায়। কিন্তু আমরা তা কিনতে জানি না।’ ‘কীভাবে? ‘জীবনের রঙ হলো ভালো মুহূর্ত, সুন্দর স্মৃতি। দ্যা বিউটিফুল মোমেন্ট অ্যান্ড দ্যা বিউটিফুল মেমোরিজ। তুমি জীবন জুড়ে যত বেশি ভালো স্মৃতি তৈরি করতে পারবে, তত বেশি ওই নোনা ধরা খারাপ মেমোরিজগুলো ঝাপসা হয়ে যেতে থাকবে। ক্ষতগুলো শুকিয়ে যেতে থাকবে।’
নিজের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার অর্থহীন চেষ্টা নিরন্তর করে যায় মানুষ। যদিও দিন শেষে আবার নিজের বৃত্তেই ঘুরপাক খায়, তাতেই স্বস্তি বোধ করে। পুরনো সবকিছুর মায়ার টানে আটকে যায়।
মানুষের মন বড় রহস্যময়। ভুলে যাওয়া ভালোবাসাকেও সে খুব যত্ন করে ঠাঁই দিয়ে রাখে মনের কোনো অচিন কুঠুরিতে। প্রকৃতি মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিভ্রান্তিকর দৃশ্য তৈরি করে, যেন মানুষ সুতো কেটে উড়ে যাওয়ার কথা কখনো না
ভাবে। যত দূরেই যাক না কেন, দিন শেষে যেন ফিরে আসে ভালোবাসার মায়াবী সুতোয় জড়িয়ে রাখা সংসারের নাটাইয়ে। আচ্ছা, সব ঘুড়ি কি আদৌ নাটাইয়ে ফিরে আসতে পারে? নাকি কিছু কিছু ঘুড়ি সুতো কেটে উড়ে যায় ওই সুদূর নীলাকাশে? কখনও কখনও কিছু ঘুড়িকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হয় নাটাই কিংবা ঘুড়ি নিজেই ব্যর্থ হয় নাটাইয়ের ভালোবাসার টান বুঝতে। কোথায় হয় তাদের ঠিকানা, কোথায় তারা খুঁজে পায় আশ্রয়, সব কি আমরা জানতে পারি?
একজন নির্বাসিত তীরন্দাজ। নাম আর্থার। ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী। জানে যুদ্ধের সুকৌশলও। সমুদ্র পথে আপন রাজ্য এন্টালিস ছেড়ে চলে আসে আল্টাটিকে। এদিকে আল্টাটিকের রাজকুমারী এ্যাডেলিনা। রূপে অপরূপা। স্বর্গের অপ্সরা যেন! বলা যেতে পারে স্বর্গের ফুল ফুটে উঠেছে ধুলোবালির এই পৃথিবীতে। অথচ রহস্যময়ী একজন নারী। প্রায় রাতেই একজন করে সুদর্শন পুরুষের সাথে রাত্রিযাপন করে। এবং ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয় সমুদ্রের জলে! একদিন রাজকুমারী এ্যাডেলিনা মুগ্ধ হয় তীরন্দাজ আর্থারের ধনুর্বিদ্যা দেখে। রাজকুমারীর বুকের অতলে জমতে থাকতে অনুভূতির উষ্ণতা। প্রকৃতির নিয়মে জমজমাট হয়ে উঠে এই দুই মানব-মানবীর প্রেম। অথচ এদের সম্পর্কে পূূর্ণতা আসে না। বিষ কিংবা বিষাদের তীর যেন অষ্টপ্রহর টংঙ্কার তুলে তীব্র গতিতে ধেয়ে আছে মানুষের সম্পর্কের শরীরে...। কিন্তু কেন? তীরন্দাজ এমন একটি উপন্যাস না প্রেমের না যুদ্ধের। উপন্যাসটি মূলত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের।একজন নির্বাসিত তীরন্দাজ। নাম আর্থার। ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী। জানে যুদ্ধের সুকৌশলও। সমুদ্র পথে আপন রাজ্য এন্টালিস ছেড়ে চলে আসে আল্টাটিকে। এদিকে আল্টাটিকের রাজকুমারী এ্যাডেলিনা। রূপে অপরূপা। স্বর্গের অপ্সরা যেন! বলা যেতে পারে স্বর্গের ফুল ফুটে উঠেছে ধুলোবালির এই পৃথিবীতে। অথচ রহস্যময়ী একজন নারী। প্রায় রাতেই একজন করে সুদর্শন পুরুষের সাথে রাত্রিযাপন করে। এবং ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয় সমুদ্রের জলে! একদিন রাজকুমারী এ্যাডেলিনা মুগ্ধ হয় তীরন্দাজ আর্থারের ধনুর্বিদ্যা দেখে। রাজকুমারীর বুকের অতলে জমতে থাকতে অনুভূতির উষ্ণতা। প্রকৃতির নিয়মে জমজমাট হয়ে উঠে এই দুই মানব-মানবীর প্রেম। অথচ এদের সম্পর্কে পূূর্ণতা আসে না। বিষ কিংবা বিষাদের তীর যেন অষ্টপ্রহর টংঙ্কার তুলে তীব্র গতিতে ধেয়ে আছে মানুষের সম্পর্কের শরীরে...। কিন্তু কেন? তীরন্দাজ এমন একটি উপন্যাস না প্রেমের না যুদ্ধের। উপন্যাসটি মূলত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের।
"সে ডুবে গেল!
মৃত্যুর পর সে ডুবে গেল গভীর কালো এক অন্ধকারে। এই অন্ধকার থেকে মুক্তির উপায় কারো জানা নেই, যে একটু আগে মারা গেছে তার যে কী ভীষণ যন্ত্রণা ছিল কিংবা তার জীবনের সুখের মাত্রাটাইবা কি ছিল; সেটা ও ছাড়া আর কেউ কখনো জানবে না। পৃথিবীর সবটুকু কালো যখন মানুষটাকে নিজের মধ্যে গ্রাস করে নিল তখন সে বুঝল...
বইটা এখানেই শেষ।
শেষ বলতে এর পরের অংশটুকু নেই। চমৎকার একটি উপন্যাসের শেষটুকু নেই। এর কোনো মানে হয়?
তিনদিন হলো আশরাফ উদ্দিন অফিস থেকে ফিরে বইটি পড়ছেন। আজকে শেষ পাতায় এসে বাধ্য হয়ে তাঁকে থামতে হলো। চমৎকার একটি উপন্যাসের শেষের কিছু পাতা না থাকায় তিনি জানতে পারছেন না কী পরিণতি হয়েছে মার্কের, জানতে পারছেন না পাহাড়ের খাদে নতুন যে বাড়িটি বানিয়েছে মার্লিন দম্পতি তাদের কী অবস্থা এখন; অথবা বিটকেল বুড়োটা নদী থেকে ফিরে কী তুলকালাম করেছে। রাখাল ছেলেটা যে সদ্যবিবাহিত মেয়েটির প্রেমে পড়েছে তারইবা কী হবে?"
বিজনের ঘরের প্রতিটা কোনায় তার ছোঁয়া আছে। দেয়ালে ঘড়ির পাশে কাঁপড়ের ডিজাইন করা ওয়ালমেটের দিকে তাকালে তাকে মনে পড়ে। ক্যালেন্ডারের পুরোনো পাতায় লাল, কালো দাগ গুলোও মনে করিয়ে দেয় যে সেই মানুষ টা এই ঘরটায় থাকতো।
কী অদ্ভুত! মানুষ টা নেই, অথচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো আজও মানুষ টা'কে ভুলতে দেয় না।
এই ভূমিকায় আপনাদের একটা গল্প বলি।
এই এত্তবড় গল্পটার পেছনের গল্প। প্রথম যখন লেখা শুরু করি ‘উপসংহারে তুমি আমি’ তখন গল্পটা এত বড় ছিল না। খুবই ছোট্ট একটা সাধারণ প্লট। দুই মামাতো ফুপাতো ভাই বোনের মধ্যে হওয়া প্রেম-ভালোবাসা ও প্রণয়ের গল্প। আমার অনুমান আমাকে জানিয়েছিল খুব বেশি হলে সাত থেকে দশ পর্বে গল্পটা শেষ হবে। তারপর যখন মনস্থির করে গল্পটা ফেসবুকে দেয়া শুরু করলাম টের পেলাম সেই ছোট্ট গল্পটাই যা আমি তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলাম, প্রথম অংশই যেন দশ পর্বে শেষ হয় না।
লাইটিল নামক নতুন একটি গ্রহে অবতরণ করে অনুসন্ধানী স্পেসশিপ সিসকো। গ্রহটিতে আগে কখনো মানুষ আসেনি। এই প্রথম। কোনো প্রাণীও নেই গ্রহটিতে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে অভিযাত্রীরা তিনটি ডিম পায়। একটি থেকে জন্ম নেয় মানুষের মতো দেখতে এক পুরুষ প্রাণী। পুরুষ বাচ্চাটি জন্মের সাথে সাথে মধ্যেই কথা বলতে শুরু করে মানুষের সাথে। নিজের গোত্রের নাম জানায় লালিন, আর তার নাম বলে পাইমান। পাইমানের অবিশ্বাস্য একটা ক্ষমতা রয়েছে, অন্য প্রাণীর মস্তিষ্কপঠন করতে পারে। সবচেয়ে কমবয়সি নারী অভিযাত্রী নিতিনার মস্তিষ্কপঠন করে মানুষের জীবনচক্র, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সক্ষমতা সম্পর্কে জেনে যেতে থাকে পাইমান। নিতিনার কাছে নিজের অভিলাষও ব্যক্ত করে সে, তার মূল উদ্দেশ্য নিজের গোত্রের বংশবৃদ্ধি করা। কিন্তু অন্য দুটো ডিম থেকে জন্ম নেওয়া দুই মেয়ে লালিনকে যখন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, তখন উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে যায় পাইমান। নিজের বংশরক্ষার জন্য হঠাৎই সে অপহরণ করে নিতিনাকে। নিয়ে যায় পাহাড়ের নিচে নির্জন এক সুড়ঙ্গের মধ্যে। নিতিনা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও পারে না। উপলব্ধি করে পাইমানের হাতে বন্দি সে। পাইমানের সন্তান এখন যে তাকে জন্ম দিতেই হবে। কিন্তু মানুষ হয়ে কীভাবে সে অন্য প্রাণীর সন্তান জন্ম দেবে! ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে তার! এদিকে ক্যাপ্টেনসহ অন্য অভিযাত্রীরা পাইমানের হাত থেকে নিতিনাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা এত সহজ নয়! স্বাভাবিক লেসার গান পাইমানের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত কী নিতিনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল? আর কী ঘটেছিল লাইটিল গ্রহের বিস্ময়কর প্রাণী পাইমানের?