জীবন্ত কবর দিলে একটা মানুষের কেমন লাগে জানেন? আমি জানি।
আমি জানি কারণ আমাকে জীবিত অবস্থায় মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।
একবার দুবার নয়। তিনবার।
সে গল্পই বলতে চাইছি আপনাদের।
আমরা গিয়েছিলাম মহাকাল গ্রামে, নিখোঁজ দুই তরুণ-তরুণীর সন্ধানে।
মহাকাল গ্রাম কোথায়? আগে নাম শুনেননি? শোনার কথাও নয়।
স্বাধীনতার পরবর্তী কোনো ম্যাপে মহাকালের অবস্থান পাবেন না। নিজে নিজে মহাকালের পথ খুঁজে বের করতে গিয়ে লাভ নেই। শুধুমাত্র আগে থেকে যে মহাকালে গিয়েছে সে-ই জানে মহাকালের পথের নিশানা।
কিন্তু মহাকাল থেকে ফিরে আসে না কেউ।
তাহলে আমি কি করে ফিরে এলাম? হ্যাঁ, এই প্রশ্ন আপনার মনে আসতেই পারে।
আমার মনেও প্রশ্নটা এসেছে শত সহস্রবার। উত্তর খুঁজে পাইনি।
আপনি একটু চেষ্টা করে দেখবেন নাকি? দেখুন মহাকালের রহস্যভেদ করতে পারেন কি না।
মাকান্দো যাবেন?
স্যরি স্যরি! আসল মাকান্দো না, গরীবের মাকান্দো!
একটা আধবুনো জায়গা, যেখানে সারাবছর কমবেশি বৃষ্টি ঝড়ে, চারপাশে জঙ্গল, টিলার উপরে একটা ইংরেজ আমলের ডাকবাংলো। যাবেন নাকি?
ঝড় - বৃষ্টি - চিরহরিৎ বনাঞ্চল - আদিবাসীদের পল্লী - রহস্যময় মন্দির - বানের পানির ধাক্কায় নেমে আসা একটা মানুষখেকো শ্বাপদ - প্রত্নতত্ত্বের প্রফেসর - ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের দুই শিকারী আর ঘুরতে আসা চার বন্ধু মিলে সরগরম একটা অভিযানে যাওয়া যায় কিন্তু।
যাবেন না?
বাংলোর বাবুর্চি ইউসুফের হাতের রান্না খেলে কিন্তু আঙুল চাটতেই থাকবেন।
তাও যাবেন না?
থাক! আপনার আর যেতে হবে না। নিওলিথিক পিরিয়ডের আতঙ্কের ভয় পেয়েছেন আপনি! ভয় পেলে কি আর অভিযান হয়?
অয়ন-জিমিকে নিয়োগ দেন বৃদ্ধ এক ভদ্রলোক। তার ধারণা, আদিবাসীদের এক দানবকে তিনি দেখেছেন, যেটা দেখতে অর্ধেক পতঙ্গ, অর্ধেক মানুষ। এই নিশিপতঙ্গ যারা দেখে, তাদের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। একের পর এক বিপদে তাদের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। ওই বৃদ্ধের বাবাও নাকি দেখেছিলেন ওই নিশিপতঙ্গ। অয়ন-জিমিকে এবার বের করতে হবে নিশিপতঙ্গকে। তবে আসলেই কি আছে এই নিশিপতঙ্গ, নাকি বৃদ্ধের কল্পনা! সেটি বের করতেই লেগে যায় দুই বন্ধু।
খুকখুক করে দুবার কেশে নিলেন সুপ্রীতিদি। তারপর ভয় ভয় গলায় বললেন, ‘কোনো শব্দ কোরো না, প্লিজ! চুপচাপ বসে থাকো তোমরা কিছুক্ষণ।’ ঘরের এদিক-ওদিক তাকালেন তিনি। সতর্ক ও গোপন কথার মতো ফিসফিস করে বললেন, ‘রূপংকরের লাশটা উঠে বসবে একটু পর!’
‘রূপংকর ঠিক কখন মারা গেছে, দিদি?’ সাদের পাশে বসা রাহিদ জিজ্ঞেস করল।
‘সন্ধ্যার দিকে।’ উত্তর দিলেন সুপ্রীতিদি, ‘রূপংকরের লাশটা একটা থাপ্পড়ও
মেরেছে বাবাকে।’
‘লাশ থাপ্পড় মারে কীভাবে!’ সাদের
গলায় বিস্ময়।
বইটি একবার পড়া শুরু করলেই হবে—মাত্র এক লাইন, এক প্যারা কিংবা এক পাতা। আমি নিশ্চিত—তুমি আর উঠতে পারবে না, ভুলে যাবে খাওয়া-নাওয়া, ভুলে যাবে সবকিছু।
দেখো, ভয়ংকর রূপংকর তোমাকে কোথায় নিয়ে যায়। সেই জায়গাটা তোমার কল্পনার একেবারেই বাইরে।
এবং সবশেষে পুরোই দম আটকে আসবে তোমার। মাথার ভেতর কেবল তোলপাড় হবে—এটা কী করে সম্ভব!
সাগরিয়া গ্রামে ঘটতে থাকে একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা। বাসার স্যার নেমে পড়লেন রহস্য উদ্ঘাটনে। সঙ্গে কয়েকজন দুরন্ত কিশোর। রহস্যের জগতে প্রবেশ করে কিশোরের দল বুঝতে পারে, কিছু ঘটনা লৌকিক, কিছু-বা অলৌকিক। কিন্তু রহস্য ভেদ করতে আসা বাসার স্যার নিজেই যখন রহস্যময় হয়ে ওঠেন, পিলে চমকে যায় তাদের।
একদিকে কবর থেকে সদ্য উঠে আসা মফিজুল হক কিংবা তালগাছের আগায় চড়ে বসা চড়বাবা অথবা ঠিক মাঝদুপুরে টংদোকানদারের ধাতবরূপ তর্জনীহেলন, অন্যদিকে বাসার স্যারের হেঁয়ালিপূর্ণ ভাবসাব—কিশোরের দল খাবি খেতে খেতেও নাক তুলে শ্বাস নেয়। অতঃপর গা ঝাড়া দিয়ে উঠে আসে তারা। বাসার স্যারকে সঙ্গে নিয়েই সাগরিয়া গ্রামে ফিরিয়ে আনে অসাধারণ এক আনন্দময় আবহ।