Product Reviews নির্বাসন
Write your own review
Existing reviews
স
বই: নির্বাসন; লেখক: সাদাত হোসাইন; ধরন: সমকালীন উপন্যাস; প্রকাশক: অন্যধারা
"মায়া"-মানুষের মনের এক অবাধ্য অনুভূতি। কখন কার জন্য মায়া পড়ে যায় তা আমরা নিজেরাও জানি না। নির্বাসন উপন্যাস জুড়ে লেখক সাদাত হোসাইন মায়া ছড়িয়ে গেছেন। কঠোর চরিত্র গুলোর ভেতরের মায়াটাকেও কিভাবে যেন তুলে এনেছেন অবলিলায়।
সেই মায়ার টানেই নির্বাসনে যায় একের পর এক উপন্যাসের চরিত্র গুলো। সংসারের মায়া, জীবনের প্রতি মায়া, সম্মানের মায়া, ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য মায়া।
নির্বাসন অনেক বড় উপন্যাস হলেও হুট করেই এর গল্পের সাথে মিশে যাবেন আপনি। অনেকটা সময় ধরে আপনার মনেও কাজ করতে পারে বিষন্নতা মাখানো এক মায়া।
নির্বাসন অনেক বড় একটা উপন্যাস। সবথেকে বড় কথা হল এর কোন সার সংক্ষেপ নাই। লেখক সাদাত হোসাইন সব সময় একটা কথা বলেন, তিনি গল্পের মানুষ। আসলেই তাই। নির্বাসন পড়ার পরে আমার অনুভূতি হয়েছিল অনেকটা এরকম ” এক টুকরো জীবনের গল্প পড়লাম”।
মানুষের জীবন যেমন বহতা নদীর মত, তাতে হাসি, কান্না, দুঃখ সব ভাসে, আবার মাঝে মাঝে টর্নেডোর মত সব সমীকরন বদলে দেওয়া ঘটনাও থাকে… তেমনি এই উপন্যাস।
এত বড় উপন্যাস পড়তে ধৈর্য দরকার হয়। যদি তাতে মাল মশলা না থাকে তবে আপনি একটুতেই হাল ছেড়ে দেবেন। কাহিনী যদি একটু পরপর আপনাকে চমকে না দিতে পারে, যদি পাঠক মনে প্রশ্ন না জাগে এর পরের পাতায় কি চমক আছে, তবে সেই উপন্যাস বানিজ্যিক ভাবে ফ্লপ।
অনেক কঠিন কঠিন উপন্যাস পড়ে আছে বাংলা সাহিত্যে, আপনি হয়ত তাদের নাম শোনেননি। এগুলো পড়তে বসলে ঘুম চলে আসবে। সাহিত্য বিচারে তারা অসাধারন, কিন্তু পাঠক বিচারে তারা দুর্ভেদ্য। এরকম উধাহরন দেয়াই যায়…।
আশার বিষয় নির্বাসন আপনাকে হতাশ করবে না, বিরক্ত করবে না। তবে কিছুটা বিষন্ন যে করবে তা অবশ্যই।
যে কোনো ভালো গল্পের মূল চালিকা শক্তি হল পাঠক যখন গল্পের ভেতের নিজেকে আবিষ্কার করে, নিজেকে কল্পনা করে কোন একটি চরিত্রে তখনই পাঠক মজা পায়। অদ্ভুত বিষয় হল এই গল্পের কোন চরিত্রের সাথে আমি নিজেকে মেলাতে পারিনি, কিন্তু তারপরেও এই বিশাল উপন্যাস পড়তে আমার একটুও কষ্ট হয়নি।
কারন প্রাঞ্জল ভাষায় এক টুকরো জীবনের গল্প অনেক দিন পরে হাতের মুঠোয় ছিল।
আমি শহুরে মানুষ, তাই উপন্যাসের পটভুমি আর স্থান আমার কাছে অপরিচিত লাগতেই পারে। কিন্তু নির্বাসন পড়ে বিল অঞ্চল, নদী, চর এবং সেখানকার পরিবেশের যে চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে সহজেই অনুমেয় মাটির কাছাকাছি তিনি জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন।
তার ভালোবাসা এবং অভিজ্ঞতা উপন্যাসের স্থান আর কালকে বেশ শক্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। হয়ত লেখকের শৈশব বা কৈশরের অভিজ্ঞতার কিছুটা নমুনা আমরা দেখলাম নির্বাসন উপন্যাসে।
উপন্যাসের চরিত্রদের কথা কিছুটা বলা যাক। কনা এবং মনসুরকে যদিও আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাসের নায়ক নায়িকা মনে হবে আপনার কাছে, কিন্তু আমাকে যদি প্রধান চরিত্র বাছাই করতে হয় তবে আমি জোহরাকেই বেছে নেব এই উপন্যাসের ঘটনার কারিগর হিসেবে।
উপন্যাসে কনা কিংবা মনসুরের আগেই আবির্ভাব ঘটে জোহরার। চরম স্বাধীনচেতা এক কিশোরী, ডাকাত সর্দার তোরাব আলীর নাতনী, যার পরিনত বুদ্ধির অসাধারন প্রমান মেলে পুরোটা সময়।
সব থেকে বেশি সাহস দেখায় সে মনসুরের প্রেমে পড়ে… এবং পরে তাকে মুক্ত করে দিয়ে। নিজ সীদ্ধান্তে অটল থাকার যে কঠিন চরিত্র সাদাত হোসাইন এঁকেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
এবার একটু দূর্বল দিকগুলো বিশ্লেষন করি। কনা এবং মনসুরের প্রেমের যে কথপোকথন তা অনেকটাই নাটুকে মনে হয়েছে আমার কাছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে ঠিক এভাবে কথা বলে কিনা মানুষ তা নিয়ে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে।
আমি গল্প পছন্দ করি কিন্তু অতি নাটুকেপনায় মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার থেকে জোহরার প্রেমের প্রকাশ এবং চরিত্র অনেক বেশি জান্তব এবং মানবিক।
ঐ যে বললাম নির্বাসন উপন্যাস আসলে একটুকরো জীবনের গল্প। এর শুরুটাও নেই শেষটাও নেই। মাঝখানের ঘটনাবলির একটা অংশ আমাদের সামনে দৃশ্যমান শুধু। মনসুরের ফিরে আসা কিন্তু আসলেই একটা নির্বাসন। তোরাব আলী লস্করের সাজানো সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়াটাও একটা বহমান প্রক্রিয়া।
আমাদের আক্ষেপ রয়েই যাবে…।
লেখক হিসেবে সাদাত হোসাইন কেমন সেটা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র। আফসোস তার কাজের সাথে আরো আগে আমার পরিচয় হয়নি। আমি বড়জোর তার নির্বাসন উপন্যাস নিয়ে কি-বোর্ডে কয়েকটা অক্ষর লিখতে পারি।
কিন্তু আমি নিশ্চই আশা করতে পারি বাংলা সাহিত্য বেশ ভালো মানের একজন গল্পকার পেতে যাচ্ছে। বয়সে সাদাত ভাই এখনো তরুন। এপার বাংলা ওপার বাংলা সবার জন্যই তিনি মায়া ছড়িয়ে যাবেন আরো অনেক যুগ ধরে।
সেই মায়ার টানেই নির্বাসনে যায় একের পর এক উপন্যাসের চরিত্র গুলো। সংসারের মায়া, জীবনের প্রতি মায়া, সম্মানের মায়া, ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য মায়া।
নির্বাসন অনেক বড় উপন্যাস হলেও হুট করেই এর গল্পের সাথে মিশে যাবেন আপনি। অনেকটা সময় ধরে আপনার মনেও কাজ করতে পারে বিষন্নতা মাখানো এক মায়া।
নির্বাসন অনেক বড় একটা উপন্যাস। সবথেকে বড় কথা হল এর কোন সার সংক্ষেপ নাই। লেখক সাদাত হোসাইন সব সময় একটা কথা বলেন, তিনি গল্পের মানুষ। আসলেই তাই। নির্বাসন পড়ার পরে আমার অনুভূতি হয়েছিল অনেকটা এরকম ” এক টুকরো জীবনের গল্প পড়লাম”।
মানুষের জীবন যেমন বহতা নদীর মত, তাতে হাসি, কান্না, দুঃখ সব ভাসে, আবার মাঝে মাঝে টর্নেডোর মত সব সমীকরন বদলে দেওয়া ঘটনাও থাকে… তেমনি এই উপন্যাস।
এত বড় উপন্যাস পড়তে ধৈর্য দরকার হয়। যদি তাতে মাল মশলা না থাকে তবে আপনি একটুতেই হাল ছেড়ে দেবেন। কাহিনী যদি একটু পরপর আপনাকে চমকে না দিতে পারে, যদি পাঠক মনে প্রশ্ন না জাগে এর পরের পাতায় কি চমক আছে, তবে সেই উপন্যাস বানিজ্যিক ভাবে ফ্লপ।
অনেক কঠিন কঠিন উপন্যাস পড়ে আছে বাংলা সাহিত্যে, আপনি হয়ত তাদের নাম শোনেননি। এগুলো পড়তে বসলে ঘুম চলে আসবে। সাহিত্য বিচারে তারা অসাধারন, কিন্তু পাঠক বিচারে তারা দুর্ভেদ্য। এরকম উধাহরন দেয়াই যায়…।
আশার বিষয় নির্বাসন আপনাকে হতাশ করবে না, বিরক্ত করবে না। তবে কিছুটা বিষন্ন যে করবে তা অবশ্যই।
যে কোনো ভালো গল্পের মূল চালিকা শক্তি হল পাঠক যখন গল্পের ভেতের নিজেকে আবিষ্কার করে, নিজেকে কল্পনা করে কোন একটি চরিত্রে তখনই পাঠক মজা পায়। অদ্ভুত বিষয় হল এই গল্পের কোন চরিত্রের সাথে আমি নিজেকে মেলাতে পারিনি, কিন্তু তারপরেও এই বিশাল উপন্যাস পড়তে আমার একটুও কষ্ট হয়নি।
কারন প্রাঞ্জল ভাষায় এক টুকরো জীবনের গল্প অনেক দিন পরে হাতের মুঠোয় ছিল।
আমি শহুরে মানুষ, তাই উপন্যাসের পটভুমি আর স্থান আমার কাছে অপরিচিত লাগতেই পারে। কিন্তু নির্বাসন পড়ে বিল অঞ্চল, নদী, চর এবং সেখানকার পরিবেশের যে চিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে সহজেই অনুমেয় মাটির কাছাকাছি তিনি জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে এসেছেন।
তার ভালোবাসা এবং অভিজ্ঞতা উপন্যাসের স্থান আর কালকে বেশ শক্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। হয়ত লেখকের শৈশব বা কৈশরের অভিজ্ঞতার কিছুটা নমুনা আমরা দেখলাম নির্বাসন উপন্যাসে।
উপন্যাসের চরিত্রদের কথা কিছুটা বলা যাক। কনা এবং মনসুরকে যদিও আপাত দৃষ্টিতে উপন্যাসের নায়ক নায়িকা মনে হবে আপনার কাছে, কিন্তু আমাকে যদি প্রধান চরিত্র বাছাই করতে হয় তবে আমি জোহরাকেই বেছে নেব এই উপন্যাসের ঘটনার কারিগর হিসেবে।
উপন্যাসে কনা কিংবা মনসুরের আগেই আবির্ভাব ঘটে জোহরার। চরম স্বাধীনচেতা এক কিশোরী, ডাকাত সর্দার তোরাব আলীর নাতনী, যার পরিনত বুদ্ধির অসাধারন প্রমান মেলে পুরোটা সময়।
সব থেকে বেশি সাহস দেখায় সে মনসুরের প্রেমে পড়ে… এবং পরে তাকে মুক্ত করে দিয়ে। নিজ সীদ্ধান্তে অটল থাকার যে কঠিন চরিত্র সাদাত হোসাইন এঁকেছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
এবার একটু দূর্বল দিকগুলো বিশ্লেষন করি। কনা এবং মনসুরের প্রেমের যে কথপোকথন তা অনেকটাই নাটুকে মনে হয়েছে আমার কাছে। ভালোবাসার মানুষের সাথে ঠিক এভাবে কথা বলে কিনা মানুষ তা নিয়ে আমার যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে।
আমি গল্প পছন্দ করি কিন্তু অতি নাটুকেপনায় মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। তার থেকে জোহরার প্রেমের প্রকাশ এবং চরিত্র অনেক বেশি জান্তব এবং মানবিক।
ঐ যে বললাম নির্বাসন উপন্যাস আসলে একটুকরো জীবনের গল্প। এর শুরুটাও নেই শেষটাও নেই। মাঝখানের ঘটনাবলির একটা অংশ আমাদের সামনে দৃশ্যমান শুধু। মনসুরের ফিরে আসা কিন্তু আসলেই একটা নির্বাসন। তোরাব আলী লস্করের সাজানো সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়াটাও একটা বহমান প্রক্রিয়া।
আমাদের আক্ষেপ রয়েই যাবে…।
লেখক হিসেবে সাদাত হোসাইন কেমন সেটা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র। আফসোস তার কাজের সাথে আরো আগে আমার পরিচয় হয়নি। আমি বড়জোর তার নির্বাসন উপন্যাস নিয়ে কি-বোর্ডে কয়েকটা অক্ষর লিখতে পারি।
কিন্তু আমি নিশ্চই আশা করতে পারি বাংলা সাহিত্য বেশ ভালো মানের একজন গল্পকার পেতে যাচ্ছে। বয়সে সাদাত ভাই এখনো তরুন। এপার বাংলা ওপার বাংলা সবার জন্যই তিনি মায়া ছড়িয়ে যাবেন আরো অনেক যুগ ধরে।
Was this review helpful?